আমানতের সুদহার আরও কমবে

সমকাল | বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সমকাল : নব্বইয়ের দশকে আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। ২০২০ সালে এসে এখন ঋণের সুদহার (ক্রেডিট কার্ড ছাড়া) সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হলো। অর্থনীতিতে এবং ব্যাংক খাতে এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?

আলী রেজা ইফতেখার : আমরা এতদিন শুনে আসছিলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত ও ঋণ উভয় ক্ষেত্রে সুদহার বেঁধে দিতে যাচ্ছে। এখন দেখলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ঋণের সুদহারের ওপর সীমা আরোপ করে সার্কুলার করেছে। আমানতের সুদহারের বিষয়ে সেখানে কিছু বলা হয়নি। ঋণের সুদহার কমানোর যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, এর ফলে শিল্পায়ন উৎসাহিত হবে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। কেননা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যয় এতে করে কমবে। অর্থমন্ত্রী এবং ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির সঙ্গে এর আগে এবিবির বৈঠক হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, এপ্রিল থেকে সুদহার বেঁধে দেওয়া হবে। আমরা কিন্তু এ জন্য মাসখানেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। ব্যাংকগুলোকে যেহেতু ঋণের সুদহার কমাতে হবে, সেজন্য আমানতের সুদহার যে যার মতো করে কমাতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো পোর্টফোলিও পর্যালোচনা করছে। ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সুদহার কার্যকর হওয়ার পর যাদের ঋণ বাবদ ব্যয় কমবে, তারা কীভাবে শিল্পায়নে আরও অবদান রাখবে তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

সমকাল : আপনাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে তো আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার কথা হয়েছিল?

আলী রেজা ইফতেখার : হ্যাঁ, সেখানে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে এবং ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার কথা হয়েছিল। আমরা গতকাল পর্যন্ত সার্কুলার পেয়েছি ঋণের সুদহারের ওপর। আমরা এখনও আমানতের ৬ শতাংশের সার্কুলার পাইনি। যদিও ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে আনছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দিক বা না দিক, আমানতের সুদহার আরও কমবে। ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হলে আমানতের সুদহার কমাতেই হবে। না কমিয়ে কোনো উপায় নেই। ইতোমধ্যে কেউ কেউ ১০ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশে, কেউ সাড়ে ৭ শতাংশে এমনকি ৬ শতাংশেও নামিয়েছে আমানতের সুদহার।

সমকাল : আপনার মতে আমানতের সুদহার কি ৬ শতাংশে বেঁধে দেওয়া উচিত?

আলী রেজা ইফতেখার : আমানতের সুদহার এখন চাপ দিলেও কমবে, না দিলেও কমবে। দেখুন, সব ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি এক নয়। কারও কারও তারল্যের ওপর চাপ রয়েছে। হয়তো কোনো ব্যাংক তার তারল্য প্রবাহের জন্য ৬ শতাংশের জায়গায় ৭ শতাংশ সুদে আমানত নিতে পারে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে। এসব অনেক কিছুই বিবেচনার বিষয় রয়েছে।

সমকাল : এখন তো মূল্যস্ম্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি। আমানতের সুদহার এবং মূল্যস্ম্ফীতির হার একই রকম হলে সঞ্চয় নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করেন?

আলী রেজা ইফতেখার : আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার নির্দেশনা এখনও জারি হয়নি। এ কারণে এখন বলা যাবে না, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশই হবে। তবে আমানতের সুদহার নিশ্চিতভাবেই কমবে। এ কারণে সরকার সম্প্রতি ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদহার অনেক কমিয়েছে। যদিও জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদহার আগের মতোই আছে, যা ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি। কেবল তো শুরু হলো। এখন দেখা যাক, আমানতকারীরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান।

সমকাল : সরকার গঠিত কমিটি তো বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। আপনাদের কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ ছিল?

আলী রেজা ইফতেখার : আমরা অনুরোধ করেছিলাম, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), ভোক্তা ঋণ এবং ক্ষুদ্র ঋণকে ৯ শতাংশের বাইরে রাখা হোক। কিন্তু আমাদের অনুরোধ রাখা হয়নি। যারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত, হয়তো তাদের কাছে এ মর্মে আরও তথ্য-উপাত্ত রয়েছে যে, এ মুহূর্তে সব ঋণের সুদহার কমালে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

Link: https://samakal.com/todays-print-edition/tp-industry-trade/article/200228390/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A7%87-