কম সুদে আমানত পাওয়া গেলে মুনাফা খুব বেশি কমবে না

প্রথম আলোর | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আগামী এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জন্য ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে আমানতের সুদহার শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ব্যাংক খাতে এর প্রভাব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব।

 

প্রথম আলো:  বাংলাদেশ ব্যাংক তো শেষ পর্যন্ত ঋণের সুদ নির্দিষ্ট করে দিল। এটা কি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে?

আলী রেজা ইফতেখার: বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে নতুন সুদহারের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাই সেটি বাস্তবায়ন করতেই হবে। সুদহার কমবে—এটা আগে থেকেই আমাদের জানা ছিল, তাই আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। এ কারণে বলতে পারি, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হবে না। আগামী এপ্রিল থেকে সব ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হবে। কম সুদে আমানত পাওয়া গেলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো সমস্যা হবে না।

প্রথম আলো: কিন্তু আমরা তো জানি, ব্যাংকগুলোর আয়ের ৭৫ শতাংশই আসে সুদ থেকে। সুদহার কমে গেলে আয় তো কমে যাবে ব্যাংকের। এ চাপ কী ব্যাংক নিতে পারবে?

আলী রেজা ইফতেখার: ব্যাংকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে আমানতের সুদ কমানো। এটা না হলে ব্যাংকগুলোর মার্জিন (সুদহারের পার্থক্য) কমে যাবে। ঋণের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে উৎপাদন খাতে ঋণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন খরচ যাতে কমে আসে। আপাতত মনে হচ্ছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর আয়ে প্রভাব পড়বে। তবে আমানতের সুদ কমিয়ে আনতে পারলে ব্যাংকের আয়ের ওপর প্রভাব কমে আসবে। আমি মনে করি, জুলাইয়ের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কারণ, আমাদের কিছু উচ্চ সুদের আমানত নেওয়া আছে। এসব আমানতের মেয়াদ না শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। এখনই বলা যাবে না যে বছর শেষে মুনাফা কমে যাবে। যদি কম সুদে আমানত পাওয়া যায়, তবে ব্যাংকগুলোর মুনাফা খুব বেশি কমবে না। তার চেয়েও বড় কথা, ব্যাংকের নিজস্ব স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।

প্রথম আলো: আমানতের সুদ ৬ শতাংশে নামলে মূল্যস্ফীতি তো সব খেয়ে ফেলবে। ফলে যাঁরা সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা কীভাবে চলবে?

আলী রেজা ইফতেখার: ব্যাংকগুলো ধাপে ধাপে আমানতের সুদ কমাবে। তবে এটা সত্যি, আমানতের সুদ কমে গেলে তা আমানতকারীদের জন্য কষ্টকর হবে। আগে যাঁরা ৯-১০ শতাংশ সুদ পেতেন, তাঁদের আয় অনেক কমে যাবে। যাঁরা ক্ষুদ্র আমানতকারী, ব্যাংকে সঞ্চয় রেখে সুদ দিয়ে জীবনধারণ করে থাকেন, তাঁদের জন্য পরিস্থিতিটা বড় চ্যালেঞ্জের। তবে আমানতের সুদ কমানোর জন্য এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যদি কোনো নির্দেশনা না আসে, তাহলে কোনো ব্যাংক চাইলে বেশি সুদে আমানত নিতে পারবে। যদিও আমরা এবিবির পক্ষ থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমানতে ৬ শতাংশ সুদ দেওয়ার। যেহেতু এবিবি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়, তাই এবিবির সিদ্ধান্ত মানার বাধ্যবাধকতা নেই। 

প্রথম আলো: পুরোনো ঋণের সুদও কি ৯ শতাংশে নেমে আসবে? সুদ কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের সেবা মাশুল বেড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কী?

আলী রেজা ইফতেখার: নতুন-পুরোনো সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে অনেক কাজ করতে হবে। কারণ, নতুন সুদহারের ভিত্তিতে পুরোনো ঋণের হিসাব কষে কিস্তি নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে। তারপরও আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, ব্যাংকগুলো তা হুবহু পালন করবে। আর ব্যাংকগুলো চাইলেই সেবা মাশুল বাড়াতে পারবে না। কারণ, সেবা মাশুলের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, তাই বেশি মাশুল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে হলে ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। ঋণ আদায় জোরদার করার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া সেবার মানে আরও উন্নতি করতে হবে।

প্রথম আলো: সুদ কমানোর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। আপনি কী মনে করেন?

আলী রেজা ইফতেখার: বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতে গত তিন বছরে ঋণের যে স্থিতি, নতুন ঋণ সেই গড়ের চেয়ে কম হতে পারবে না। ফলে কোনো ব্যাংক এসব খাতে ঋণ কমিয়ে দিতে পারবে না। ঋণ কমানোর সুযোগও নেই।

প্রথম আলো: মূলধন অনুপাতে সরকারি আমানত ভাগাভাগি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেটা কত দূর এগোল। আর সরকারি আমানত ৬ শতাংশে পাওয়া যাচ্ছে কি?

আলী রেজা ইফতেখার: আমার ব্যাংকে যত সরকারি আমানত আছে, তা ৬ শতাংশে পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কেউ বেশি সুদে আমানত নিলে তারা দেশের আইন লঙ্ঘন করবে। তবে আমি অন্য ব্যাংকের কথা বলতে পারব না। মূলধন পর্যাপ্ততার হার (সিআরএআর) অনুপাতে সরকারি আমানত পাওয়ার ব্যাপারে একটা আলোচনা আছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। এর সঙ্গে আরও নতুন কিছু সূচক যুক্ত করা যেতে পারে। এভাবে সরকারি আমানত ভাগ হলে ভালো ব্যাংকগুলো ভালো আমানত পাবে। ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে উন্নতি করার চাপ তৈরি হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই প্রয়োজন।

 

Link: https://www.prothomalo.com/economy/article/1642319/%E0%A6%95%E0%A6%AE-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%BE-%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%AC-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE